মানিকগঞ্জে শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। কম খরচে অধিক লাভের আশায় আগাম জাতের বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো থাকলে চাষিরা আগাম সবজি চাষে অধিক লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মানিকগঞ্জে শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা
জেলার সাতটি উপজেলায় কম-বেশি আগাম সবজির আবাদ হলেও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলাসহ সিংগাইর ও সাটুরিয়ায় সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়। সারাবছরই বাণিজ্যিকভাবে নানান জাতের সবজি চাষ করেন এসব এলাকার কৃষকরা। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানকার উৎপাদিত সবজিগুলোর চাহিদাও রয়েছে অনেক। কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচও কম লাগে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, গত রবি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। চলতি বছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে সবজির আবাদ কমেছে ১০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে কৃষক তার জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, পটল, লালশাক ও পালংশাক, শসা আবাদ করেছেন। এসব সবজি শোভা পাচ্ছে মাঠের পর মাঠ এবং সবজিগুলো পরিচর্যার জন্য চাষিরা কাজ করছেন। জমিতে কোনো ধরনের পোকা যাতে আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য কীটনাশক দিচ্ছেন। বাঁধাকপি, ফুলকপি ও বেগুনসহ অন্যান্য সবজির বাগানের লাইন সোজা করার জন্য মাটি তুলছেন কৃষকরা।
বর্তমান সময়ে এক বিঘা জমিতে সবজি আবাদের জন্য কৃষককে গুনতে হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এ আগাম সবজি চাষে আশানুরূপ ফলন হলে এবং ভালো বাজারমূল্য ধরতে পারলে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

জেলার সাটুরিয়ার আইরমারা গ্রামের সবজিচাষি বসির আহমেদ বলেন, এবার প্রায় ২০ বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছি। এরমধ্যে দুই বিঘা জমিতে করলা, দুই বিঘায় বেগুন এবং প্রায় ১৫ বিঘায় ফুলকপি আবাদ করেছি। এরমধ্যে ৫ বিঘা হচ্ছে আগাম, প্রায় ১০ বিঘা মাঝারি এবং পুরো শীতের সিজনের। এ পর্যন্ত আমার ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তবে ভালো প্রফিট আসতে পারে বলে আশা করছি। বর্তমানে সবজির দাম মোটামুটি ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং শীত পড়লে কীটনাশক এবং বিষমুক্ত সবজি বাজারে পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ফুলকপি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী বলেন, এ বছর ৪০ শতক জমিতে ফুলকপি ও ১৫ শতক জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছি। জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে সবজির চাহিদা ও দাম ভালো পেলে খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভবান হব বলে আশা করছি।
সিংগাইর এলাকার কৃষক ছামাদ মিয়া জানান, এই মৌসুমে সবজির পরিচর্যা বেশি করতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। আবার বৃষ্টি হলে চারা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ভালো দামের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করছি।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক ড. বরীআহ নূর আহমেদ জানান, জেলায় এ বছর ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা সবজি আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে কিছু সবজি বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে সবজি চাষ আরো বাড়বে।
আরও দেখুনঃ